Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আধুনিক প্রযুক্তিতে পাটবীজ উৎপাদন সংরক্ষণ

আধুনিক প্রযুক্তিতে পাটবীজ উৎপাদন সংরক্ষণ
সাদিয়া আফরিন জুই
বাংলাদেশের অন্যতম আঁশ ফসল পাট, কেনাফ ও মেস্তা। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ত্বপূর্ণ পাটের দুটি প্রজাতি-দেশী ও তোষা। দেশী পাটের ফল গোলাকার এবং তোষা পাটের ফল লম্বা। বীজ ফসলের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে পাট বীজ উৎপাদন বলতে নাবীতে পাট বীজ উৎপাদনকেই বোঝানো হয়। পাটবীজ উৎপাদনের জন্য অনেক সময় আঁশ ফসলের একাংশের গাছ না কেটে বীজ উৎপাদন করলে বন্যা বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বীজের মানের সাথে ফলনও কমে যায়। তাই সবকিছু বিবেচনায় নাবীতে পাটবীজ উৎপাদনের ব্যবস্থা নেয়া লাভজনক। নাবী মৌসুমে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে পাটবীজ উৎপাদনে নি¤েœর পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়।
বীজ বপন পদ্ধতি : সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে ভাল বীজ পেতে হলে দেশী পাটবীজ শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি (মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট) এবং তোষা পাটের বীজ ১৫ই ভাদ্র (৩০শে আগস্ট) এর মধ্যে বপন করতে হবে। যে সব স্থানে বৃষ্টিপাত  তুলনামূলকভাবে কম হয় সেসব স্থানে এইপদ্ধতিতে সহজেই বীজ উৎপাদন করা যায়। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে জমিতে দেরিতে বীজ বপন করে পাট গাছের দৈহিক পর্যায়ের বৃদ্ধির সময় কমিয়ে ফুল, ফল ও বীজ পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে পাট গাছের লম্বায় বৃদ্ধি কম হলেও অধিক সংখ্যক ডালপালাসহ পরিপুষ্ট ফল ও বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। দেশের উত্তাঞ্চলের জেলাসমূহে (রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও বগুড়া) শীত আগে আসার জন্য ১৫ দিন আগে বীজ বপন করতে হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থাৎ যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
বীজের হার : সারিতে বপন করলে প্রতি হেক্টরে ৪ কেজি অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে ১৬ গ্রাম তোষা বীজ এবং প্রতি হেক্টরে ৫ কেজি অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে ২০ গ্রাম দেশী বীজ বপন করতে হবে। আর ছিটিয়ে বপন করলে প্রতি হেক্টরে ৫ কেজি অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে ২০ গ্রাম তোষা বীজ এবং প্রতি হেক্টরে ৬ কেজি অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে ২৪ গ্রাম দেশি পাটের বীজ বপন করতে হবে। কেনাফ সারিতে বপন করলে প্রতি হেক্টরে ১২ কেজি অর্থাৎ প্রতি শতাংশ জমিতে ৫০ গ্রাম  বীজ  বপন করতে হবে।
সার প্রয়োগ : জমির উর্বরতা বুঝে শেষ চাষের সময় একর প্রতি ১৫-২০ কেজি (প্রতি শতাংশে ১৫০-২০০ গ্রাম) ইউরিয়া, ৩০ কেজি (প্রতি শতাংশে প্রায় ৩০০ গ্রাম) টিএসপি, ৮ কেজি (প্রতি শতাংশে ৮০ গ্রাম) এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ২০/২৫ দিন পর প্রথম নিড়ি দিয়ে একর প্রতি         ১৫-২০ কেজি (প্রতি শতাংশে ১৫০-২০০ গ্রাম) ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং ৪৫-৫০ দিন পর একর প্রতি ১৫-২০ কেজি (প্রতি শতাংশে ১৫০-২০০ গ্রাম) ইউরিয়া সার তৃতীয়বার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
কা- বা ডগা রোপণ পদ্ধতি : সাধারণত মধ্য আষাঢ় (জুন মাসের শেষ সপ্তাহ) থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে ডগা রোপণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। যে বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেশি হতে থাকে বা নাবীতে বপনের জন্য যখন কৃষকের হাতে কোন বীজ  থাকে না সে বছর আঁশ ফসল থেকে বেছে কা- ও ডগা কেটে নিয়ে বীজ উৎপাদন করা যায়। কেননা বৃষ্টির দিনেও কা- ও ডগা রোপণ করা যায়, কেবল জমিতে পানি না দাঁড়ালেই চলে। পাট আঁশ ফসলের জমি থেকে ১০০দিন বয়সের  সুস্থ সবল গাছ বেছে নিতে হবে। যে সমস্ত গাছে ফুল আসেনি সেই সকল গাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করতে হবে। কাটিং ধারালো ছুরি দিয়ে তেরছা ভাবে কেটে নিতে হবে, কাটিং ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা হবে এবং প্রতি কাটিং-এ ২/৩টি কুড়ি থাকবে। ডগা কাটার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কাটা জায়গা থেঁতলে না যায়। থেঁতলানো অংশ মাটিতে পুঁতলে সহজে পচে যায় এবং শিকড় গজায় না।
ডগা রোপণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেদিন ডগা সংগ্রহ করা হয়েছে সেদিনই উহা যেন রোপণ করা হয়। তবে মেঘলা দিনে বা পড়ন্ত রোদে ডগা রোপণ করা উত্তম। ডগা বা কা- উত্তর-দক্ষিণ দিকে সারি করে এবং উত্তর দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে বা কাত রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি. বা দেড় ফুট এবং ডগা থেকে ডগার দূরত্ব ১৫ সেমি. বা প্রায় ৬ ইঞ্চি হতে হবে। প্রতিটি ডগার প্রায় ৬ সেমি. বা ৩ ইঞ্চি পরিমান অংশ মাটির নিচে পুতে দিতে হবে।
চারা রোপণ পদ্ধতি : চারা রোপণ পদ্ধতিতে প্রথমে বীজতলায় বীজ বপন করে চারা উৎপন্ন করা হয়। ৩মি.ী১মি. আকারের বীজতলায় আষাঢ় (মধ্য জুন-মধ্য জুলাই) মাসের মধ্যে ৫০-১০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে। ইতোমধ্যে জমির জো বুঝে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি নরম করে মূল জমি প্রস্তুত করতে হয়। বীজ তলার চারার বয়স ২৫-৪০ দিন হলে চারাগুলো রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়। আষাঢ় মাসে বপনকৃত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত রোপণ করা যায়। বীজতলা থেকে চারা তুলে নিয়ে প্রথমে ছায়ায় রাখতে হবে। প্রতিটি চারার ডগার ২/৩টি কচিপাতা রেখে অন্যান্য সব পাতার বোটা বাদে বাকি অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে। বীজতলা থেকে যেদিন চারা তুলা হবে ঐদিনই মূল জমিতে চারা রোপণ করা ভালো। মূল জমিতে সারি করে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪০ সেমি. বা ১.৫ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১৫ সেমি. বা প্রায় ৬ ইঞ্চি রাখতে হবে। মেঘলা দিনে অথবা সন্ধ্যার আগে যখন রোদ থাকে না তখন চারা রোপণ করা ভালো।
পাট বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : পাট ও কেনাফ বীজ ফসল অতিরিক্ত পাকলে বিশেষ করে তোষা ফল ফেটে বীজ ঝড়ে যায়। আর কম পাকলে বীজ চিটা হবার আশঙ্কা থাকে। দেশী ও তোষা উভয় ক্ষেত্রেই শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ফল বাদামি রং ধারণ করলে গাছের গোড়া সহ কেটে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। তবে ২/৩ কিস্তিতে বীজ সংগ্রহ করলে বীজের মান ভালো হয়। বপন সময়ের উপর নির্ভর করে ফসল কর্তনে প্রায় ১২০-১৪০ দিন সময় লাগে। পাকা ফলসহ গাছ কাটার জন্য শুকনা দিন বেছে নিতে হবে। বৃষ্টি ভেজা দিনে পাকা ফলসহ গাছ না কাটাই উত্তম। বীজ ফসল কর্তনের সময় জমিতে মরা ও শুকনা গাছগুলো বাদ রেখে বীজ ফসল সংগ্রহ করতে হবে। মরা ও রোগাক্রান্ত গাছ একই সাথে কর্তন করলে সমস্ত বীজ রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কারণ, বীজ ফসলের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণের চেয়ে গুণগত মান অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ফলসহ গাছ সংগ্রহ করার পর গাছ বা ডগা ৩/৪ দিন রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে। প্রতি দিন শুকানো শেষে গাছগুলো ঠা-া হলে পলিথিন বা কোন আবরণ দিয়ে ঢেকে রাতের কুয়াশা বা বৃষ্টি থেকে গাছগুলোকে রক্ষা করতে হবে। বীজ মাড়াই করে, পর পর ৫/৬ দিন পূর্ণ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে পাটবীজ সংরক্ষণ করা উচিত। প্রতি দিন শুকানো শেষে বীজগুলোকে ঠা-া করে পলিথিন, চট বা ত্রিপল দিয়ে ভালো করে রাতে ঢেকে রাখতে হবে যেন কুয়াশা বা বৃষ্টিতে না ভিজে। ভালোভাবে শুকানোর পর শুকনো বীজকে দুই দাঁতের ফাঁকে নিয়ে চাপ দিলে যদি কট করে বীজটি ভেঙে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বীজ ভালোভাবে শুকানো হয়েছে। বীজ অবশ্যই ত্রিপল বা চট জাতীয় কোন কিছুর উপর শুকাতে হবে। অন্যথায় বীজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শুকানোর পর বীজের আর্দ্রতা সাধারণত শতকরা ৮-৯ এর কাছাকাছি থাকে। বীজ ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য বীজের আর্দ্রতা শতকরা ৯ এর নিচে থাকা উচিত। আমাদের দেশে ক্ষুদ্র চাষির সংখ্যা বেশি এবং তাদের বীজের পরিমাণও কম। সে জন্য টিনের কৌটা, প্লাস্টিকের ক্যান ইত্যাদি বায়ুরোধী পাত্রে তারা বীজ সংরক্ষণ করতে পারে। তবে বীজের পরিমাণ বেশি হলে প্লাস্টিক বা টিনের ড্রামে তা সংরক্ষণ করা যাবে। একটি বিষয় সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ভাবেই পাটবীজ সংরক্ষণের পাত্রে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। পরিমাণে কম বীজ কখনও বড় কোন ড্রাম বা পাত্রে রাখা ঠিক হবে না।   
যদি বায়ুরোধী পাত্র না পাওয়া যায় তখন মাটির কলসী, হাড়ি বা মটকায় বীজ রাখা যেতে পারে। তবে এসব পাত্রে বীজ রাখার পূর্বে মাটির কলসী, হাড়ি বা মটকাকে আলকাতরা বা রঙয়ের প্রলেপ দিতে হবে অথবা বীজ রাখার পূর্বে মোটা পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে ঐ পাত্র মুড়ে দিতে হবে যাতে মাটির পাত্রটি বায়ুরোধী হয়। বড় কোন পাত্রে অল্প পরিমাণ বীজ রাখা ঠিক হবে না। এতে পাত্রের খালি অংশের আর্দ্রতা বীজের গুণগত মান খারাপ করতে পারে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ক্রপ ম্যানেজমেন্ট শাখা, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মানিক মিয়া এভিনিউ ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৬৮৬৬৫৪৫৬, ই- মেইল : ংধফরধন্সৎঁ@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon